কঠোরভাবে বাজার মনিটরিংয়ের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
বাজার মনিটরিংয়ে জোর দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি খুব কঠোরভাবে মনিটরিং করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
এ দেশের নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কথা বলার পেছনে কয়েকটি উদ্দেশ্যের কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রভাবশালী ওই দেশগুলোর বিষয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, কোনো খেলা খেলে বাংলাদেশের ভাগ্য যেন কেউ নষ্ট করতে না পারে, দেশবাসীকে সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের আলোচনাসভায় এসব কথা বলেন। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনাসভাটির আয়োজন করা হয়।
পশ্চিমা দেশগুলোর এ দেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহের কারণ ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থানের দিক দিয়ে ভারত মহাসাগর, অন্যদিকে প্রশান্ত মহাসাগর। এই ভারত মহাসাগরেই আমাদের বে অব বেঙ্গল। এর গুরুত্ব অনেক বেশি। প্রাচীনকাল থেকেই কিন্তু এখান দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে।
এই জায়গাটা নিয়ে কারো সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। সম্পূর্ণ নিষ্কণ্টক যোগাযোগের একটা পথ। এই জলপথ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে নির্বিঘ্নে পণ্য পরিবহন হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ আমাদের গণতন্ত্রের নাম নিয়ে, নির্বাচনের নাম নিয়ে, নানা নাম নিয়ে এ দেশে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি করতে চায় যাতে করে এই ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর এই জায়গাটা ব্যবহার করা যায়।
আর এটা ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে আক্রমণ করা এবং দেশগুলোকে ধ্বংস করা কারো কারো উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই কিন্তু এদের নানা ধরনের টালবাহানা। এটা দেশবাসীকে বুঝতে হবে।’
দেশের কিছু বুদ্ধিজীবীর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা এসব না বুঝেই এদের (পশ্চিমা দেশগুলো) সঙ্গে সুর মেলায়। দুটো পয়সার লোভে তারা নানাভাবে এসব কাজ করে বেড়াচ্ছে।
এসব বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। তা ছাড়া আমি বলব, ভারত মহাসাগরের অন্যান্য দেশগুলো যথেষ্ট সচেতন আছে, সেটা আমি বিশ্বাস করি। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেখানে বহু বছর ধরে অশান্তি ছিল, সেখানে আমি ক্ষমতায় আসার পরে শান্তি ফিরিয়ে আনি। সেখানেও এখন নানা ধরনের অশান্তির চেষ্টা। যেহেতু আমি এটা জানি, বুঝি সে কারণে কিভাবে আমাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে তাদের কিছু পদলেহী গোলাম আছে তাদের ক্ষমতায় বসাবে, এই জায়গাটা নিয়ে খেলবে, সেটাই হচ্ছে চেষ্টা।’
পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘যে বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত, যাদের হাতে আমার মা-বাবা, ভাইয়ের রক্তের দাগ, তাদের জন্য এরা উতলা হয়ে পড়েছে। আমার দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে, ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলা করেছে। শুধু একবার নয়, বারবার আমাদের মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে। আজ তাদের নিয়ে ক্ষমতায় বসাতেই হবে। আসলে ক্ষমতায় বসানো নয়। এখানে একটা কথা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, এদের উদ্দেশ্য এখানে নির্বাচন নয়, এদের উদ্দেশ্য গণতন্ত্র নয়। এরা একটা জিনিস করতে চায়, আজ যে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভিত্তিটা মজবুত করেছি, জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি, বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে, বাংলাদেশ যে আজ এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের পথে, আজ দারিদ্র্যের হার আমরা ২৫ শতাংশ থেকে ১৮.৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে এরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কয়েকজন খুনির আমেরিকা, কানাডায় পলাতক থাকার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখনো কয়েকটা খুনি বিভিন্ন দেশে আছে। আমরা আনার চেষ্টা করছি। সব চাইতে অবাক লাগে যেসব দেশে খুনিদের আশ্রয় দিয়ে রাখা হয়েছে তারা যখন মানবাধিকারের কথা বলে, নির্বাচনের কথা বলে, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তারা যেন উতলা হয়ে পড়েছে। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, ২০০১ সালে যখন এ দেশের মানুষকে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্বিচারে অত্যাচার করল, অসংখ্য মানুষকে হাত কেটে মেরেছে, অত্যাচার করেছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়েছে তখন নির্বাচন নিয়ে কথা হয়নি কেন? সে নির্বাচনে তো আমাদের হারার কথা নয়। সে নির্বাচনে আমাদের জোর করে হারানো হয়েছে। যখন খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছে তখন তাদের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা কোথায় ছিল? জিয়াউর রহমানের নির্বাচনের বিরুদ্ধে তো কোনো কথা বলেনি। এরশাদ ৪৮ ঘণ্টা ভোটের রেজাল্ট বন্ধ রেখে যখন ফল ঘোষণা দিয়েছে তখন তো সে নির্বাচন নিয়ে এদের কোনো উদ্বেগ দেখিনি। হঠাৎ এবারের নির্বাচনের সময়ে তারা যেন খুব উতলা হয়ে পড়ল। নির্বাচনের দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন কোথায় কি কিভাবে হবে, সেটা নিয়ে সবথেকে বেশি...একের পর এক তাদের লোক আসা শুরু করল। কারণটা কী?’
পশ্চিমা দেশগুলোর ভূমিকার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি এখন তাদের চোখের মণি। যে বিএনপি এত সন্ত্রাস করেছে, জাতির পিতাকে হত্যার সঙ্গে জড়িত, যে বিএনপি কয়েক দিন আগেই তো আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করল। কয়েক দিন আগেও তো পুলিশের গাড়িতে আক্রমণ করল। পুলিশ কি বসে বসে মার খাবে? জাতীয় সম্পদ নষ্ট করল। আজ তাদের নিয়ে মাতামাতি, তাদের সঙ্গে বসতে হবে, তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। অনেক কথা বলেছি।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘গণতন্ত্র কী? আমি একবার আমেরিকায় বলেছিলাম, আপনাদের এখানে একটা মনুমেন্টে লেখা দেখলাম, গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল। আর আমি এমন একটা দেশ থেকে এসেছি যেখানে গভর্নমেন্ট অব দি আর্মি, ফর দি আর্মি, বাই দি আর্মি জেনারেল। এমন একটা দেশের সরকারকে আপনারা কিভাবে সমর্থন করেন। আপনাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কি আটলান্টিকের পারে গিয়ে বদলে যায়?’
আলোচনাসভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কামরুল ইসলাম প্রমুখ। আলোচনাসভাটি সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ।
বাজার মনিটরিংয়ে জোর দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি খুব কঠোরভাবে মনিটরিং করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার ও উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন সংকট এখন আঞ্চলিক সংকটে পরিণত হয়েছে। ভবিষ্যতে এই সংকট আরও গভীর হতে পারে। তাই দ্রুত সময়ে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে পূর্ণ নাগরিক মর্যাদায় প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা জরুরি এবং এটাই একমাত্র স্থায়ী সমাধান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের দেশ ভৌগোলিক সীমারেখায় অত্যন্ত ছোট, কিন্তু জনসংখ্যার দিক থেকে বড়। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশের পরিবেশ এবং সবকিছু পরিকল্পিতভাবে হওয়া উচিত।