• 20 May, 2024

দিনাজপুর-৩ আসনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল

দিনাজপুর-৩ আসনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল

ইকবালুর রহিম, ফারুকুজ্জামান চৌধুরী মাইকেল, আহমেদ শফি রুবেল, মো. আশরাফুল ইসলাম, রাশেদ পারভেজ, সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, মির্জা আশফাক ও মোফাজ্জল হোসেন দুলাল।

দিনাজপুর পৌরসভা ও সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত দিনাজপুর-৩ আসনটি নানা কারণে সব দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে চারদলীয় জোটের প্রার্থী ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) তৎকালীন সভাপতি শফিউল আলম প্রধানকে পরাজিত করে চমক সৃষ্টি করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবালুর রহিম। পরের দুই নির্বাচনেও জয় পেয়েছেন তিনি। কিন্তু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সব দল অংশ নিলে আওয়ামী লীগকে যেমন কঠিন লড়াইয়ে পড়তে হবে, তেমনি চ্যালেঞ্জে পড়বেন তিনবারের এমপি ইকবালুর রহিম। এছাড়া এ আসনে বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রার্থী মো. আশরাফুল ইসলাম কুলা প্রতীক নিয়ে দুবার প্রতিদন্ডিতা করেন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর কয়েক মাস বাকি থাকলেও এলাকায় এখন পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে দলগুলোর তেমন কোনো তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিমের পাশাপাশি এই আসেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ফারুকুজ্জামান চৌধুরী মাইকেল, মির্জা আশফাক আহমেদ ও জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদ পারভেজ। অপরদিকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে আছেন জেলা বিএনপির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন দুলাল, রংপুর বিভাগীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার সভাপতি মো. আশরাফুল ইসলাম। জাতীয় পার্টি থেকে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ শফি রুবেল ও জামায়াতে ইসলামীর হয়ে মাইনুল আলম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে।

 

ইকবালুর রহিমের তিন মেয়াদে এলাকায় বেশ কিছু উন্নয়ন হলেও তাঁকে নিয়ে আছে সমালোচনাও। দলের অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং, শহরের রাস্তাঘাটের উন্নয়ন না হওয়া, অতিরিক্ত ইজিবাইকের কারণে যানজট সমস্যার নিরসন হয়নি। এগুলো নিয়ে এমপি ও পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের দ্বন্দ্ব এমনকি উভয়ের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডার ঘটনাও ঘটেছে। জাহাঙ্গীর বিএনপির রংপুর বিভাগীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফুজ্জামান মিতা বলেন, ‘নেত্রীর (শেখ হাসিনা) কাছে সারা দেশের এমপিদের সার্বিক চিত্র আছে। দিনাজপুরের ছয়টি আসনের মধ্যে দু-তিনটিতে পরিবর্তন আসতে পারে বলে আলোচনা আছে। নেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন, আমরা তাঁর হয়েই কাজ করব।’

মনোনয়নপ্রত্যাশী ও জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদ পারভেজ বলেন, একজন এমপি অবশ্যই জন ও কর্মিবান্ধব হবেন। কিন্তু এখন দলে ত্যাগী ছাত্রনেতাদের কোনো মূল্যায়ন নেই। এর ফলে অনেকে দূরে সরে গেছেন। আবার দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের নাম নিজের বাবার নামে পরিবর্তন করে দলকে বিতর্কের মুখে ফেলেছেন।

এদিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে সরকারকে হটাতে চায় বিএনপি। দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশী মোফাজ্জল হোসেন দুলাল বলেন, নির্বাচন নিয়ে এখনই ভাবছে না বিএনপি। তা ছাড়া, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়াও নির্বাচনে যাবে না। এখন একটাই লক্ষ্য—সরকারকে হটিয়ে জনগণকে নিপীড়নমুক্ত করা।

বিএনপির নেতারা নির্বাচন নিয়ে নির্বিকার থাকলেও ভেতরে-ভেতরে জোরেশোরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, রংপুর বিভাগে ২০১৮ সালের নির্বাচনে যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের নিয়ে গত ১৪ মে দলের চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বৈঠক হয়। সেখানে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শেষে তিনি সম্ভাব্য প্রার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেন।
নির্বাচনের বিষয়ে দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিএনপি জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আন্দোলন করছে। তবে তিনি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না।

দিনাজপুর -৩ আসনে বিকল্পধারা বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার সভাপতি মো. আশরাফুল ইসলাম  বলেন- জনগণের সাথে কাজ করতে চাই এবং সাধারণ জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে চাই। দিনাজপুর ৩ আসনকে পুরোপুরি মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান অব্যাহত রেখে মশকমুক্ত ও ডেঙ্গুমুক্ত এলাকা নিশ্চিত করা। খেলার মাঠ ও পার্কগুলোকে আরও আধুনিককরণ করা,সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত করা। ইউনিয়ন ও পৌরসভার রাস্তা, ফুটপাত ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা। নিরাপত্তার জন্য রাস্তায় গেট ও সিসি ক্যামেরা লাগানো ইত্যাদি কাজ সম্পূর্ণ  করা ।  আমার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের চাঁদাবজি, টেন্ডারবাজি ও জমি দখলের অভিযোগ নেই। আমি এলাকার জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করবো। কেউ আমার কাছ থেকে খালি হাতে ফিরে যাবে না। তাই সর্বস্তরের জনগণ আমার পক্ষে রয়েছে।