• 19 May, 2024

ইন্টারকন্টিনেন্টালে গাইতেন জাফর ইকবাল

ইন্টারকন্টিনেন্টালে গাইতেন জাফর ইকবাল

সংগীত কিংবা চলচ্চিত্র—দুই জগতেই ছিল তাঁর মুগ্ধকর বিচরণ। যেমন স্টাইলিশ তেমন অভিমানী। ছিলেন আবেগপ্রবণ ও বোহেমিয়ান। কথাগুলো বাংলা চলচ্চিত্রের চিরসবুজ নায়ক জাফর ইকবাল প্রসঙ্গে। শহুরে রোমান্টিক ও রাগী তরুণের ভূমিকায় দারুণ মানালেও সব ধরনের চরিত্রে ছিল তাঁর পদচারণা।

সংগীতশিল্পী-অভিনেতা ছাড়াও জাফর ইকবাল ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। আজ এই গায়ক-অভিনেতা-মুক্তিযোদ্ধার জন্মদিন, বেঁচে থাকলে তিনি ৭৩ বছরে পা রাখতেন।

ফ্যাশন আর স্টাইল সময়ের চেয়ে অনেকখানি এগিয়ে ছিলেন জাফর ইকবাল। যে কারণে ভক্ত ও সহকর্মীদের চোখে তিনি ‌ফ্যাশন আইকন হিসেবে স্বীকৃত। অভিনয়ের পাশাপাশি চমৎকার গান গাইতেন এই অভিনেতা। বেশকিছু ছবিতে তিনি গায়কের চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন। কেউ কেউ তাঁকে বাংলাদেশের এলভিস প্রিসলি বলেও অভিহিত করেন।
 
১৯৫০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশানে জন্ম জাফর ইকবালের। বাড়িতে ছিল গানবাজনার প্রচলন। তাঁর বোন শাহানাজ রহমতুল্লাহ একজন সুপরিচিত কণ্ঠশিল্পী। বড় ভাই আনোয়ার পারভেজও নামকরা শিল্পী। জাফর ইকবাল প্রথমে গায়ক হিসেবেই পরিচিতি পান। ছিল নিজের ব্যান্ডদল। ১৯৬৬ সালে তিনি গড়ে তুলেছিলেন নিজেদের একটি ব্যান্ড। নাম ‌‘র‌্যাম্বলিং স্টোন’। প্রতি শনি ও রোববার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গান গাইতেন তাঁরা। কোনো এক কনসার্টে গান গাইতে গিয়েই নির্মাতা খান আতাউর রহমানের নজরে পড়েন জাফর ইকবাল। সেখান থেকেই শুরু! ১৯৭০ সালে খান আতাউর নির্মাণ করেন ‘আপন পর’। এ চলচ্চিত্রেই চিত্রনায়িকা কবরীর বিপরীতে নায়ক হিসেবে অভিষেক ঘটে জাফর ইকবালের।

১৯৮৪ সালে নায়করাজ রাজ্জাক অভিনীত বদনাম ছবিতে ‘হয় যদি বদনাম হোক আরও’ গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন জাফর ইকবাল। তখন গানটি ছিল তরুণ প্রজন্মের মুখে মুখে। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি মৌলিক গানেও সরব ছিলেন জাফর ইকবাল। নিজের গাওয়া গানগুলো নিয়ে ‘কেন তুমি কাঁদালে’ নামে একটি একক অ্যালবাম বের করেছিলেন। তাঁর নিজের গাওয়া ‘সুখে থেকো ও আমার নন্দিনী’, ‘যেভাবেই বাঁচি বেঁচে তো আছি’, ‘শেষ করো না শুরুতেই খেলা’, ‘বিদেশ থেকে দেশে আইলে’ গানগুলো এখনো শ্রোতাপ্রিয়।

কথিত আছে—‘সুখে থেকো ও আমার নন্দিনী হয়ে কারো ঘরণী’ গানটি চিত্রনায়িকা ববিতার জন্যই গেয়েছিলেন জাফর ইকবাল। ছড়িয়েছিল তাঁদের প্রেমের গুঞ্জন। তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় হতাশ হয়েই জাফর ইকবাল অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জোর গুঞ্জন উঠেছিল।

সব মিলিয়ে ১৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন জাফর ইকবাল। তাঁর অভিনীত ‘ভাই বন্ধু’, ‘চোরের বউ’, ‘অবদান’, ‘সাধারণ মেয়ে’, ‘একই অঙ্গে এত রূপ’, ‘ফকির মজনুশাহ’, ‘দিনের পর দিন’, ‘বেদ্বীন’, ‘অংশীদার’, ‘মেঘবিজলী বাদল’, ‘সাত রাজার ধন’, ‘আশীর্বাদ’, ‘নয়নের আলো’, ‘গৃহলক্ষ্মী’, ‘ওগো বিদেশিনী’, ‘প্রেমিক’, ‘নবাব’, ‘সিআইডি’, ‘মর্যাদা’, ‘সন্ধি’ ইত্যাদি চলচ্চিত্র ছিল সুপারহিট। ক্যারিয়ারের গ্রাফ যখন আকাশচুম্বী তখন পাকস্থলি ও কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত হন জাফর ইকবাল। ১৯৯২ সালে ৮ জানুয়ারি মাত্র ৪০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।