• 20 May, 2024

সর্বজনীন পেনশনের যুগে বাংলাদেশ

সর্বজনীন পেনশনের যুগে বাংলাদেশ

বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা শেষে তরুণ চাকরিপ্রত্যাশীদের বড় অংশের প্রথম পছন্দ সরকারি চাকরি। চাকরি শেষে সারা জীবন পেনশন নিরাপত্তার মতো সুবিধা এত দিন শুধু সরকারি চাকরিতেই ছিল। তবে মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল বেসরকারি খাতেও পেনশনব্যবস্থা চালুর। অবশেষে সরকারি সুবিধার মতো না হলেও নিজের জমানো টাকায় বহুল প্রত্যাশিত বেসরকারি খাতের সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি (স্কিম) চালু করেছে সরকার।

গতকাল বৃহস্পতিবার এই কর্মসূচি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ফলে সবার জন্য সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি উন্মুক্ত হয়েছে, যা ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি।

চারটি স্কিম

সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আপাতত চার ধরনের স্কিম চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রগতি স্কিম, প্রবাসীদের জন্য প্রবাস স্কিম, অনানুষ্ঠানিক খাত অর্থাৎ স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা স্কিম আর নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রয়েছে সমতা স্কিম।


এরই মধ্যে পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট  (www.upension.gov.bd)  চালু হয়েছে। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আজ থেকে যে কেউ পেনশন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করে আপনার ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।’

কত মানুষ আসবে স্কিমের আওতায়

দেশের চার শ্রেণির প্রায় ১০ কোটি মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে চালু করা হয়েছে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা।


অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ছিল এক কোটি ২০ লাখ এবং ২০৪১ সালে সেই সংখ্যা হবে তিন কোটি ১০ লাখ। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তাকাঠামোর আওতায় আনতে এবং নিম্ন আয় ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত সমাজের ৮৫ শতাংশ মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার সুযোগ তৈরি করতে স্কিম চালু করা হয়েছে।
কারা আবেদন করতে পারবেন

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বকর্মে নিয়োজিত ও স্বল্প আয়ের নাগরিক ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা এতে অংশ নিতে পারবেন। তবে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবীরা আপাতত এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারছেন না। এই স্কিম থেকে বাদ পড়ছেন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাপ্রাপ্ত এক কোটি ৩৮ লাখ মানুষ।


তাঁদের সবাই নগদ ভাতার সুবিধা পাচ্ছেন। পেনশন স্কিমে অংশ নিতে হলে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা সমর্পণ করতে হবে।
যেভাবে নিবন্ধন

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে গেলে ইউপেনশন ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। দেশে-বিদেশে থাকা বাংলাদেশি নাগরিক জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ফরম অনলাইনে পূরণ করে আবেদন করতে পারবেন। সেই আবেদনের বিপরীতে একটি ইউনিক আইডেন্টিটি নম্বর (ইউআইডি) দেওয়া হবে। আবেদনে উল্লেখ থাকা আবেদনকারীর মোবাইল নম্বর এবং অনিবাসীদের ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় ই-মেইলের মাধ্যমে ইউআইডি নম্বর, চাঁদার হার এবং মাসিক চাঁদা দেওয়ার তারিখ জানানো হবে। পেনশন কর্তৃপক্ষ বলেছে, ভুল তথ্য দিয়ে আবেদন করলে সেই আবেদন বাতিল হবে এবং জমা করা অর্থ ফেরতযোগ্য হবে না।

যেসব কাগজপত্র লাগবে

পেনশনব্যবস্থার আওতায় আসতে গেলে একজন আবেদনকারীর অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) থাকতে হবে। প্রবাসী বাংলাদেশি যাঁদের এনআইডি নেই, তাঁরা পাসপোর্টের ভিত্তিতে এই পেনশন কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারবেন। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এনআইডি সংগ্রহ করে পেনশন কর্তৃপক্ষের কাছে তা জমা দিতে হবে।

চাঁদা জমা যেভাবে

সর্বজনীন পেনশন স্কিমের বিধিমালায় বলা হয়েছে, পেনশনের চাঁদা জমা দিতে হবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে। আর জমা দেওয়া যাবে অনলাইন ব্যাংক, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ও তফসিলি ব্যাংকের যেকোনো শাখার মাধ্যমে। চারটি স্কিমের জন্য আলাদা চারটি হিসাব খোলা হয়েছে সোনালী ব্যাংকে। এ হিসাবগুলোতে চাঁদা জমা হবে। সোনালী ব্যাংক দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও পরে অন্য ব্যাংকও যুক্ত হবে।

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম বলেছেন, ‘দেশের ভেতরে আমাদের ব্যাংকের এক হাজার ২২৯টি শাখাই সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। পেনশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ব্যাপারে আমাদের চুক্তি হয়েছে।’

কত জমা দিয়ে কত পাওয়া যাবে

সরকারঘোষিত চার ধরনের পেনশন কর্মসূচির মধ্যে প্রবাস কর্মসূচিতে একজন ১৮ বছর বয়সী প্রবাসী যদি মাসে ১০ হাজার টাকা করে জমা দেন, তবে ৪২ বছর পর তিনি প্রতি মাসে পাবেন তিন লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৫ টাকা করে। আবার ১৮ বছর বয়সী বেসরকারি কোনো চাকরিজীবী যদি মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে জমা দেন, তাহলে তিনি ৪২ বছর পর মাসে পাবেন এক লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা করে। সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায়ও ১৮ বছর বয়সী কেউ যদি পাঁচ হাজার টাকা করে মাসে জমা দিয়ে পেনশনে যুক্ত হন, তাহলে ৪২ বছর শেষে তিনিও মাসে এক লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা করে পাবেন।

তবে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য নির্ধারিত সমতা পেনশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের মাসিক চাঁদার অর্ধেক দেবে সরকার। সমতা কর্মসূচিতে একজন অংশগ্রহণকারীকে মাসে দিতে হবে ৫০০ টাকা, এর বিপরীতে সরকার দেবে আরো ৫০০ টাকা। এভাবে কেউ যদি ৪২ বছর এক হাজার টাকা করে জমা দেন, তাহলে মেয়াদ শেষে তিনি মাসে পেনশন পাবেন ৩৪ হাজার ৪৬৫ টাকা করে।