• 29 Mar, 2024

‘আমার ছেলে বুকে ফিরে আইছে, অনুরোধটা রাখবেন সুজনকে ফেল করাবেন না’-মা

‘আমার ছেলে বুকে ফিরে আইছে, অনুরোধটা রাখবেন সুজনকে ফেল করাবেন না’-মা

সুজনের মা সাজেদা বেগম সমাজের দায়িত্বশীল মহলের প্রতি অনুরোধ করে বলেছেন, যারা এসএসসি (দাখিল) পরীক্ষার কর্মকর্তা আছেন তাদের কাছে আমার ক্রোড়জোড়ে অনুরোধ, আমার ছেলে ভয়াঙ্ক পরিস্থিতি মোকাবেলা করে আমার বুকে ফিরে আইছে আপনারা দয়া করেন, আমার ছেলেকে ফেল করাবেন, এই অনুরোধটা রাখবেন!!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অপহরণ হওয়ার ১২ঘন্টার মাথায় সুজন শেখ নামের এক এস,এস,সি পরীক্ষার্থী তার নিজের বুদ্ধি ও কৌশলে ওই অপহরণকারীদের হাত থেকে পালিয়ে মা-বাবার কোলে ফিরে এসেছে। 

গত বৃহস্পতিবার (০৪ মে) বিকাল ৪টার দিকে সরেজমিনে খোঁজ-খবর নিতে যাই ফিরে আসা ওই এসএসসি পরীক্ষার্থীর বাড়িতে। সেখানে গিয়ে জানতে পারি, অপহরণকারীদের হাত থেকে কিভাবে পালিয়ে মা-বাবার কোলে ফিরে এসেছে সুজন।

সুজন শেখ নড়াইল সদরের মাইজপাড়া ইউনিয়নের সলুয়া গ্রামের টুকু শেখের একমাত্র ছেলে। সে দূর্গাপুর দাখিল মাদ্রাসার একজন এসএসসি (দাখিল) পরীক্ষার্থী।  

অপহরণের ঘটনা সম্পর্কে সুজন নড়াইলকণ্ঠকে জানায়, আমি দূর্গাপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে এবার এস এস সি পরীক্ষা দিচ্ছি। আমার পরীক্ষার কেন্দ্র ছিলো শাহাবাদ জামিদিয়া কামিল মাদ্রাসায়। ওইদিন আমার আরবী দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা শেষে বাইসাইকেলে করে আমি নড়াইল শহরে আমার আপার বাসাতে ফিরছিলাম। আমি যখন নড়াইল পৌরসভার গারুচরা বাজার থেকে দূর্গাপুরের দিকে রাস্তা দিয়ে শহরের দিকে যাচ্ছিলাম। মেন রাস্তা থেকে দূর্গাপুরের দিকে যাচ্ছি মাঝে একটি মেহেগুনি বাগানের কাছে গেলে একটি কাভার্ঢগাড়ি থেকে কয়েকজন লোকজন দ্রুত নেমেই আমার চোখ-মুখ বেধে সাইকেল সহ আমাকে গাড়ির ভেতর ডুকিয়ে নিয়েই গাড়ি টেনে চলে যায়। এ ঘটনাটি ঘটে তখন আনুমানিক দুপুর দেড়টা-দুটা বাজে। এরপর তারা আমাকে নিয়ে সারা রাত কোন কোন জায়গা দিয়ে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা আমি বুঝতে পারছি না। আমি ভয়ে ঠান্ডা হয়ে গেছি। চোখ দিয়ে অনাবরত পানি পড়ে আমার গায়ের সব কাপড়চপড় ভিজে গেছে বুঝতে পারছি। আমাকে শুধু চোখ-মুখ বেধে একটি লোক আমাকে ঝাপটে ধরে বসে ছিলো সারপথ। এক সময় গাড়িটি মনে হলো থামলো। তখন আমাকে যে লোকটি ধরে রেখেছিলো সে আমাকে ছেড়ে গাড়ি থেকে নেমে বাইরে গেলো। আমি বুঝতে পারলাম গাড়ি রেখে ওরা হয়তো কোথাও গেছে। আমি তখন চোখ-মুখের কাপড় খুলে এদিক-ওদিক তাকিয়ে নেমেই দিলাম দৌঁড়। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে অনেকটা পথ চলে এসেছি। এরমাঝে একটি লোকের সাথে দেখা হয়। তখন জানলাম যে আমি এখন বেনাপোলে ধারে আছি। তখন আমি ওই লোকটিকে আমার ঘটনা খুলে বলি। তখন আমার বাড়ির মোবাইল নম্বরটা দেই ওই ভাইয়াকে। তিনি আমার মাকে ফোন দেন। পরে বাড়ি থেকে আমার আব্বুসহ ৪/৫ জন এসে এই বেনাপোল থেকে আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসে।  

সুজনের মা সাজেদা বেগম নড়াইলকণ্ঠকে জানান, আমার পর পর দুটি মেয়ে। আমার অনেক সাধনার ছেলে সুজন। সে দূর্গাপুর দাখিল মাদ্রাসায় পড়ে। এবার সে এস এস সি পরীক্ষা দেচ্ছে। আমার সুজন নড়াইল শহরের ওরা আপার বাসায় থেকে পড়া-শুনা করে। ওইদিন আমার ছেলে ওর আপার বাসায় ৪টা বাজে তখনও ফেরে নাই এই খবর আমার মেয়ে মোবাইলে আমাকে জানায়। আমি মা-তো .. আমি ভাবলাম আমার ছেলেতো খারাপ না। সে তো কারোর সাথে বাঝে আড্ডা দেয় না। তাহলি কি পরীক্ষা হলে কিছু হলো কি না, নাকি পুলিশে বা কোন এক্্িরডেন্ড হলো কি না এসব ভাবতে লাগলাম। পরে ও বাপ (টুকু শেখ) থানা গেছে, হাসপাতালে যেয়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজে যখন পাইনি তখন আমরা পাগলের মতো সবজায়গা দিয়ে খুঁজে বেড়াইছ। আমি সারা রাত আমার ছেলের জন্যি দোয়া-কামান পড়তিছি, পড়তি পড়তি ভোর রাত্রি মোবাইল বাইজে উঠলো। ফোন ধরলেই আমার কানে আমার সুজনের গলা শুনতে পারি। পরে ওর আব্বা ও চাতাতো ভাইরা যেয়ে বাড়ি নিয়ে আসে।

বাড়িতে এসে গোসল-টোছোল করে পরীক্ষা দিতে যায়। পরীক্ষায় বসলেই ওই পরীক্ষার হলেই তার ৩/৪ বার বমি করে ফেলে। পরে শিক্ষকরা ডাক্তার এনে চিকিৎসা করায়। আমার ছেলে ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে পারে নাই।

এ ঘটনা সম্পর্কে প্রতিবেশি সম্রাট বলেন, এধরনের ঘটনা আমাদের ভয়ের জায়গা তৈরি করেছে। পরিবার ও সমাজের সকলে এধরণের ওপর নজর রাখতে হবে। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায় এঘটনার সচেতনতা বাড়াতে হবে।