আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আরো ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিন ধরে এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে জানিয়ে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সিলিংয়ে সোনালি, সাদা, আকাশি রঙের চোখ ধাঁধানো কারুকাজ। মেঝেতে লাগানো হচ্ছে বাহারি টাইলস। চারপাশের নীল কাচে শেষ বিকালের আলো ঠিকরে পড়ে তৈরি করছে এক মোহনীয় দৃশ্যপট।
হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় (থার্ড) টার্মিনালের ভিতরে প্রবেশ করলে অনিন্দ্যসুন্দর এ কর্মযজ্ঞে যে কারও চোখ আটকাতে বাধ্য।
উদ্বোধনকে সামনে রেখে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে দেশের অন্যতম মেগাপ্রকল্প হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের নির্মাণকাজ। এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পে ৮৫ শতাংশের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ টার্মিনাল উদ্বোধন করবেন। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘থার্ড টার্মিনাল নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। অক্টোবরে এ প্রকল্পের আংশিক উদ্বোধনের (সফট ওপেনিং) সময় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সিলিংয়ের কাজ শেষ। মেঝের টাইলস লাগানোর কাজ চলছে। বাইরের গ্লাস লাগানোর কাজ শেষ। যন্ত্রপাতি লাগানো হচ্ছে। রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে চলছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারব।’ সরেজমিন প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উদ্বোধন উপলক্ষে টার্মিনাল ভবনের দ্বিতীয় তলা প্রস্তুত করা হচ্ছে। চলছে রঙের কাজ। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র সংযোজন করা হচ্ছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী টার্মিনাল ভবনে প্রবেশ করবেন। এরপর উদ্বোধন করে বোর্ডিং ব্রিজ দিয়ে উড়োজাহাজে প্রবেশ করবেন। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে চলছে কাজ। বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন কাজ চলছে। টার্মিনাল ভবনের বাইরে বোর্ডিং ব্রিজের চারপাশে ঢালাইসহ বিভিন্ন কাজ চলছে। আংশিক উদ্বোধনের জন্য তিনটি বোর্ডিং ব্রিজ সংযোজন করা হয়েছে। ভবনের দুই অংশেই স্ট্রেইট এস্কেলেটর লাগানো হয়েছে। লাগেজ বেল্ট সংযোজনও প্রায় শেষ। জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং কোরিয়ার স্যামসাংয়ের অ্যাভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি) এ টার্মিনালের নির্মাণকাজ করছে। এডিসির সেফটি অফিসার ইমাম হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রকল্পের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিদিন দুই শিফটে প্রায় ১১ হাজার কর্মী এ প্রকল্পে কাজ করছেন। উদ্বোধনকে সামনে রেখে দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দ্রুত কিন্তু কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কাজ সম্পন্ন করাই আমাদের লক্ষ্য।’ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে বর্তমানে যে দুটি টার্মিনাল রয়েছে, তার যাত্রী ধারণক্ষমতা বছরে প্রায় ৭০ লাখ। তৃতীয় টার্মিনাল তৈরি হলে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ২ কোটির কাছাকাছি। ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের এ টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি প্লেন রাখার অ্যাপ্রোন (প্লেন পার্ক করার জায়গা) নির্মাণ করা হচ্ছে। তৃতীয় টার্মিনালে তৈরি করা হচ্ছে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ। যেটি সংযুক্ত থাকবে উড়োজাহাজের সঙ্গে। টার্মিনাল ভবন হবে ২ লাখ ৩০ হাজার স্কয়ার মিটারের। ভবনের ভিতরে থাকবে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য ও অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির ছোঁয়া। নির্মাণাধীন টার্মিনালটিতে কয়েকটি স্ট্রেইট এস্কেলেটর লাগানো হচ্ছে। যারা বিমানবন্দরের ভিতরে দীর্ঘপথ হাঁটতে পারবেন না, তাদের জন্য এ ব্যবস্থা। সিঙ্গাপুর, ব্যাংককসহ বিশ্বের অত্যাধুনিক বিমানবন্দরগুলোয় বেশি যাত্রী প্রবাহের জায়গায় এ এস্কেলেটরগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি যাত্রীদের মসৃণ যাত্রার অভিজ্ঞতা দেবে। বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল। তৈরি হবে মেট্রোরেলের পৃথক একটি স্টেশনও। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আসা যাত্রীরা বিমানবন্দর থেকে বের না হয়েই মেট্রোরেলে নিজেদের গন্তব্যে যেতে পারবেন। এ ছাড়া ঢাকার যে কোনো স্টেশন থেকে মেট্রোরেলের মাধ্যমে সরাসরি বিমানবন্দরে বহির্গমন এলাকায় যাওয়া যাবে। টার্মিনালটির প্রতিটি ওয়াশরুমের সামনে থাকবে একটি করে বেবি কেয়ার লাউঞ্জ। এ লাউঞ্জের ভিতর মায়েদের ব্রেস্ট ফিডিং বুথ, একটি বড় পরিসরে ফ্যামিলি বাথরুম থাকবে। এ ছাড়া শিশুদের খেলার জন্য স্লিপার-দোলনাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা থাকবে। হেলথ ইন্সপেকশন সুবিধা, প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ফার্স্ট-এইড রুম, নানা রোগের টেস্টিং সেন্টার ও আইসোলেশন এরিয়া থাকবে। টার্মিনালের ভিতরের ভবনটির নকশা তৈরি করেছেন বিখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন। প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ প্রকল্পে ব্যয় নির্ধারিত হয়েছে ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি ৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। মোট খরচের মধ্যে সরকার দেবে ৫ হাজার ২৫৮ কোটি ৩ লাখ ৮৮ হাজার এবং ঋণ হিসেবে জাপানের সংস্থা জাইকা দেবে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। থার্ড টার্মিনালের নকশায় পর্যাপ্ত এস্কেলেটর, সাবস্টেশন ও লিফট সংযুক্ত রাখা হয়েছে। থাকবে রাডার, কন্ট্রোল টাওয়ার, অপারেশন ভবন, বহুতল কারপার্ক। তিন তলাবিশিষ্ট এ টার্মিনাল ভবনটির স্থাপত্যরীতিতে আনা হচ্ছে অনন্য নান্দনিকতা। টার্মিনাল ভবনের বহির্বিভাগে থাকবে চোখ ধাঁধাঁনো নকশা।
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আরো ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিন ধরে এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে জানিয়ে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর।
আগামী সপ্তাহ থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে দুই বেঞ্চে বিচারকাজ পরিচালনা করা হবে।